লাউ আমাদের অতি পরিচিত দৈনন্দিন খাবার। এর উৎপত্তি লাউয়ের বৈজ্ঞানিক নাম লেজেনারিয়া সিসিরারিয়া (Lagenariasiceraria )। আফ্রিকাতে। এমনকি ১০০০০ বছর আগেও লাউয়ের খোলা বাদ্যযন্ত্র বানাতে ব্যবহার করা হতো- এই প্রমান আছে।

বর্তমান পৃথিবীর সব দেশেই লাউ পাওয়া যায়। ভারতীয় উপমহাদেশে গরমের সময় পাওয়া যায়। লাউ দু রকমের হতে পারে- মিষ্টি ও তেতো। মিষ্টিটাই আমরা খাই, তেতোটা ঔষধ তোইরির জন্য ব্যবহার করা হয়।
পুষ্টি মূল্য
লাউয়ে ১৩% ভিটামিন ও ৭.৩৬% জিঙ্ক আছে। ১১৬ গ্রাম লাউ থেকে আসে ১৬ ক্যালোরি আর ১৭৪ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ১৩ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১৫ মিলিগ্রাম ফস্ফরাস ও ২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম। এ ছাড়া আর নানা ধরনের ভিটামিন আছে।
শুধু লাউয়ে নয়, লাউয়ের বীজেও স্যাপোনিন আছে, এর থেকে তেল তৈরি হয়।
লাউয়ের মাতা ও মুলের অনেক পুষ্টিগুন আছে।
লাউয়ের উপকারিতা
লাউ আমাদের খুব পরিচিত একটি খাদ্য। বাংলায় লাঊ অনেক পাওয়া যায় এবং বেশীরভাগ লোকেউ লাউ পছন্দ করে। অনেকের ধারনা আছে লাউ পেট ঠান্ডা রাখে। শুধু তাই নয়, লাউয়ের আরো অনেক গুন এবং উপকারিতা আছে। আমরা এবার দেখি, কি কি খাদ্যগুন আছে-
ফাইবারঃ
লাউয়ে অনেক ফাইবার আছে। ফাইবার মানে আমাদের যে সব পদার্থ হজম হয়না, ফলে মলের সাথে নির্গত হয় এবং মলের পরিমান বাড়ে- ফলে কোষ্ঠ-কাঠিন্য দুর হয়। এটি তাই কোষ্ঠ-কাঠিন্য দুর করে, সাথে সাথে গ্যাস কমায় এবং পাইলসের পক্ষে খুব উপকারি।
কোলেস্টেরল ও ফ্যাটঃ
লাউয়ে কোলেস্টেরল ও ফ্যাট খুব কম, তাই শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ায় না। এতে হার্টের অসুখ কমে, তাই লাউ হার্টের পক্ষে খুব উপকারী।
এন্টি-অক্সিডেন্টঃ
এখন চারিদিকে বিশাক্ত পরিবেশ। এই সম্যে নানা রোগ ব্যধি হচ্ছে। বিশাক্ত রঙ বা রাসায়নিক খেয়ে শরীরের যে ক্ষতি হয়, শরীরে অক্সিজেন আয়নের মাত্রা বাড়ে। এই আয়ন বর্তমান সময়ে বেশীর ভাগ আসুখের জন্য দায়ী। যেমন ডায়াবেটিস ক্যান্সার, হার্টের রোগ, ইয়াদি। এই আয়নকে কমাতে গেলে এন্টি-অক্সিডেন্ট নামক ভিটামিন বা খাবার খেতে হয়। লাউয়ে এই এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। ফলে শরীরে রোগ কম হয় ও অন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

ডায়াবেটিসঃ
গবেষনা করে দেখা গেছে লাউয়ে থাকা ফ্লাভোনয়েড জাতীয় রাসায়নিক রক্তে সুগারের মাত্রা কমায়।
এলার্জিঃ
গবেষনা করে দেখা গেছে, লাউ খেলে এলার্জিও কমে। লাউয়ের মুলের টাইট্রিফেন ব্র্যোনেলিক এসিড এলার্জি কমায়।
শরীরকে ঠান্ডা রাখেঃ
লাউয়ে ৯২% জল থাকে। যা আমাদের শরীরে জলের অভাব মেটায়। বিশেষতঃ গরমে আমাদের যখন ঘাম হয়, সেই জল ও মিনারেলের অভাব লাউ মেটায়।
ওজন কমায়ঃ
লাউয়ের ফাইবার এবং অন্য ভিটামিন এই ওজন কমায়।
মানষিক চাপ কমায়ঃ
লাউয়ে কোলিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক থাকে, যা দুশ্চিন্তা কমায়।
কাজেই লাউয়ের অনেক উপকারিতা আছে। কিন্তু যে কথাটি বলা দরকার, যে সব খাবারে ভিটামিন-চি আছে, রান্না করলে তাদের পুষ্টিগুন কমে যায়, লাউয়েরও তাই। সে জন্য লাউয়ের রস বা সরবত খাওয়া আরো বাশী উপকারী।

লাউয়ের কোন অংশই ফেলা যায়না। লাউয়ের বীজ, খোসা ইত্যাদি ভাজা করে খাওয়া যায় এবং ভাল টেস্ট হয়।
অবশ্যি আপনার রান্নার সব্জীর মধ্যে লাউকে অগ্রাধিকার দিন।
মনে রাখুনঃ
তবে একটি কথা মনে রাখবেন, লাউয়ে থাকা কুকুরবিটাসিন(cucurbitacins) এটিকে তেতো করে। এই রাসায়নিক কারো কারো শরীরের পক্ষে বিশাক্ত। তাই তেতো লাউয়ের রস না খাওয়া ভালো।
লাউ চিংড়ি বাঙ্গালীর একটি অতি প্রিয় খাবার।
লাউ চিংড়ি রান্না দেখতে এই ভিডিওটি দেখুন।
