ড্রাগন ফল খুবই উপকারী। তার মধ্যে প্রধান যে ৭টি কারণে আপনি ড্রাগন ফল খাবেনঃ
আগেই বলি, ড্রাগন ফল একপ্রকার ক্যকটাট জাতীয় গাছের ফল। সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশে এর প্রচুর চাষ হচ্ছে।

ড্রাগন ফল বেশ কয়েক প্রকার হয়। কোনওটির মধ্যে সাদা- বাইরে লাল, আবার কোনওটির ভিতরে ও বাইরে লাল রঙ, আবার কোনওটির বাইরে হলুদ রঙের। কাঁচা অবস্থায় এর রঙ সবুজ, পাঁকলে অন্য রঙ ধরে।

ড্রাগন ফল শরীরের পক্ষে একটি খুবই উপকারি ফল। প্রধান ৭টি কারণ এখানে বলা হল
১। উপকারী উপাদান
ড্রাগন ফলে প্রচুর নানা রকমের শরীরের পক্ষে উপকারি উপাদান আছে। যেমন, এক কাপ, [২২৭ গ্রাম] ড্রাগন ফলে আছে
- ক্যালোরি- ১৩৬
- প্রোটিনঃ ৩ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেটঃ ২৯ গ্রাম
- ফাইবারঃ ৭ গ্রাম
- আয়রনঃ শরীরের দৈনিক প্রয়োজনের ৮%
- ম্যাগনেসিয়ামঃ শরীরের দৈনিক প্রয়োজনের ১৮%
- ভিটামিন সিঃ শরীরের দৈনিক প্রয়োজনের ৯%
- ভিটামিন ইঃ শরীরের দৈনিক প্রয়োজনের ৪%
এ ছাড়া আরও আছে অনেক এন্টিওক্সিডেন্ট, যা আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। যেমন- পলিফেনল, ক্যারোটিনয়েড, বিটাসাইনিন ইত্যাদি।
২। দীর্ঘ-মেয়াদী রোগের উপশম করে
শরীরের বিপাকীয় ক্রিয়ার ফলে অনেক ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেল, আয়ন ইত্যাদি জমা হয়। যেগুলো শরীরের কোষকে ধ্বংশ করে এবং নানাবিধ মারাত্মক রোগ তৈরি করে। এন্টিওক্সিডেন্ট এই সব র্যাডিকেল, আয়ন ইত্যাদিকে অকেজো করে দেয় এবং শরীরকে এই সব মারাত্মক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
এই সব রোগের মধ্যে প্রধান হার্টের রোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং বাতের রোগ। যে সব এন্টিওক্সিডেন্ট ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকে
- ভিটামিন সিঃ ভিটামিন সি শরীরের ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়।
- বিটালানিনঃ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমাতে সাহাজ্য করে।
- ক্যারোটিনয়েডসঃ বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপেন ইত্যাদি রঞ্জক পদার্থ ড্রাগন ফলকে রঙ্গীন করে রাখে। এই সব পদার্থও শরীরের ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়, হার্টের রোগের সম্ভবনা কমায়।
৩। ফাইবারঃ
খাবারের ফাইবারের নানান ধরণের উপকার আছে। একজন মহিলার প্রতিদিন ২৫ গ্রাম ও পুরুষের ৩৮ গ্রাম ফাইবার খাওয়া দরকার। ড্রাগন ফলে এক কাপে ৭ গ্রাম ফাইবার আছে। ফাইবার হজমে সাহাজ্য করে, পেট পরিস্কার করে। কোলেষ্টরল কমায়, হার্টের রোগ কমায়, ডায়াবেটিস কমায়। এমনকি পেটের ক্যান্সারের সম্ভাবনাও কমায়। আর ফলের ফাইবার খুবই উপকারী।

৪। পেটের উপকারিতা
আমাদের পেটের মধ্যে প্রচুর ব্যাকটিরিয়া থেকে। প্রায় ৪০০ প্রকার। সবাই আমাদের ক্ষতি করে না। অনেক ব্যাকটিরিয়া উপকার করে এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়াকে মেরে ফেলে। এই সব উপকারি ব্যাকটিরিয়া না থাকলে আমাদের সবসময় পেটের গোলমাল ও অন্য অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকত। এই উপকারি ব্যাকটিরিয়া আমাদের খাদ্য থেকে খাবার সংগ্রহ করে। আমরা যে সব কার্বোহাইড্রেট জহম করতে পারিনা, সেই সব এরা খায় এবং আমাদের উপকার করে। এই সব ব্যাকটিরিয়ার খাবারকে বলে প্রি-বায়োটিক। ড্রাগন ফলে অনেক প্রিবায়োটিক থাকে। ড্রাগন ফল প্রধানতঃ যে দুই প্রকার উপকারী ব্যাকটিরিয়ার খাবার সংগ্রহ করে, তার মধ্যে আছে ‘ল্যাকটিক এসিড ব্যাসিলাই’, ‘বিফিডব্যাকটিরিয়া’।
৫। ইমিউনিটি বাড়ায়
শরীরকে নানা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি। ড্রাগন ফলে এন্টিওক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি থাকে এবং ক্যারটিনয়েডস থাকে- এই সব আমাদের শরীররের ইইউনিটি বাড়িয়ে নানা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। শরীরের কোষকেও ধ্বংশের হাত থেকে রক্ষা করে। শরীরের স্বেতরক্ত কনিকাকে রক্ষা করে।

৬। শরীরের আয়রণ সরবরাহ করে
শরীরের হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে আয়রণ লাগে। সব ফলের মধ্যে আয়রণ থাকে না। হিমোগ্লোবিন আমাদের রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এক কাপ ড্রাগন ফলে শরীরে চাহিদার ৮% আয়রন থাকে। এ ছাড়া আয়রন অত্মীকরণ করতে গেলে দরকার ভিটামিন সি, ড্রাগন ফলে অনেক ভিটামিন সি থাকে। সব মিলিয়ে ড্রাগন ফল শরীরকে যথেষ্ট আয়রণ সরবরাহ করে এবং এনিমিয়া থেকে রক্ষা করে।
৭। ম্যাগনেসিয়ামঃ
ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই দরকারী। আমাদের বিপাকীয় ক্রিয়ার জন্যে দরকারী বিভিন্ন এনজাইমে ম্যাগনেসিয়াম দরকার। প্রায় ৬০০ প্রকার রাসায়নিক প্রক্রিয়ার জন্যে ম্যাগনেসিয়াম দরকার হয়। খাবার থেকে শক্তি সংগ্রহ করা, হাড় তৈরি করা, ডি.এন.এ. তৈরি করা ইত্যাদির জন্যে ম্যাগনেসিয়াম দরকার। ড্রাগন ফলের ম্যাগনেসিয়াম শরীরের চাহিদার অনেকটাই পুরণ করে। এক কাপ ড্রাগন ফলে শরীরের ১৮% দৈনিক চাহিদা পুরণ হয়।
কি ভাবে ড্রাগন ফল খাবেন?
ড্রাগন ফল কাটলে বাইরে খোসা ও ভিতরে সাস থাকে। ভিতরের অংশটি খেতে হয়। এর মধ্যে ছোট ছোট কালো বীজ থাকে। সেই বীজও খেতে হয়। ফল কাটার পরে বাইরের খোসা থেকে সহজেই ফল বেরিয়ে আসে।
ওই অবস্থায় এমনিতেই খাওয়া যায়। এ ছাড়া পাকা ফল স্যালাডের সাথে, পেষ্ট করে দুধের সাথে, দইয়ের সাথে, যে ভাবে যে পছন্দ করে, সে ভাবেই খেতে পারে, উপকার একই থাকে।
এখন যেহেতু ড্রাগন ফল সহজেই পাওয়া যায়, তাই ড্রাগন ফল খাওয়া দরকার। আপনার ফলের তালিকায় অবশই ড্রাগন ফল রাখুন।